Powered by Blogger.

Followers

Wednesday, September 28, 2011

দুর্দিন চিরকাল থাকে না

যখন দুর্দিন ঘনিয়ে আসে
তখন মাথা ঠান্ডা রাখাই সবচেয়ে জরুরী কাজ।

যাঁদের মুখে সব সময় কথার খই ফোটে
তাঁদের দরকার তখন কিছুদিনের জন্যে বাক্‌সংযম অভ্যাস করা।

দুর্দিন আসছে, এই খবরটুকু যাঁদের কানে পৌঁছে দেওয়ার মানুষ ছিল না,
তাঁরা কবি, অধ্যাপক, রাজনীতির পন্ডিত অথবা নেতা যা-ই হোন না কেন,
তাঁদের উচিত এখনও কিছুদিন নিজেদের ভাবনাগুলিকে যাচাই
করে নেওয়া।

দুর্দিন কখনও চিরকাল থাকে না,
এ কথাটাও আমাদের সমানভাবে মনে রাখা দরকার।
নইলে সামনের অন্ধকার আমাদের ঘাড়ে এমনভাবে চেপে বসবে
যাতে রাস্তা হাঁটাই হবে কঠিন থেকে কঠিনতর সমস্যা।

দুর্দিনে আমরা নিশ্চয় যে-যার ঘরে ব'সে থাকবো না
শুভ ও অশুভের লড়াইয়ে তখনও আমাদের কাজ থেকেই যাবে!
কেউ কেউ আমাদের ছেড়ে চ'লে যাবেন, ভিন্ন আদর্শের কথা ব'লে;
অথবা নীরবে -- যাঁর যেমন রুচি ও অভ্যাস!

আর তখনই আমরা পৃথিবীকে আরেকটু বে'শি ক'রে চিনতে পারবো;
বুঝতে পারবো, কোথায় আমাদের সত্যিকারের শক্তি,
আর কোথায় আমাদের দুর্বলতা।
 
(৩০ ডিসেমবর, ১৯৮৪)

দুর্দিন চির কাল থাকে না

যখন দুর্দিন ঘনিয়ে আসে
তখন মাথা ঠান্ডা রাখাই সবচেয়ে জরুরী কাজ।

যাঁদের মুখে সব সময় কথার খই ফোটে
তাঁদের দরকার তখন কিছুদিনের জন্যে বাক্‌সংযম অভ্যাস করা।

দুর্দিন আসছে, এই খবরটুকু যাঁদের কানে পৌঁছে দেওয়ার মানুষ ছিল না,
তাঁরা কবি, অধ্যাপক, রাজনীতির পন্ডিত অথবা নেতা যা-ই হোন না কেন,
তাঁদের উচিত এখনও কিছুদিন নিজেদের ভাবনাগুলিকে যাচাই
করে নেওয়া।

দুর্দিন কখনও চিরকাল থাকে না,
এ কথাটাও আমাদের সমানভাবে মনে রাখা দরকার।
নইলে সামনের অন্ধকার আমাদের ঘাড়ে এমনভাবে চেপে বসবে
যাতে রাস্তা হাঁটাই হবে কঠিন থেকে কঠিনতর সমস্যা।

দুর্দিনে আমরা নিশ্চয় যে-যার ঘরে ব'সে থাকবো না
শুভ ও অশুভের লড়াইয়ে তখনও আমাদের কাজ থেকেই যাবে!
কেউ কেউ আমাদের ছেড়ে চ'লে যাবেন, ভিন্ন আদর্শের কথা ব'লে;
অথবা নীরবে -- যাঁর যেমন রুচি ও অভ্যাস!

আর তখনই আমরা পৃথিবীকে আরেকটু বে'শি ক'রে চিনতে পারবো;
বুঝতে পারবো, কোথায় আমাদের সত্যিকারের শক্তি,
আর কোথায় আমাদের দুর্বলতা।
 
(৩০ ডিসেমবর, ১৯৮৪)

বক্তৃতা বাবু

হেই বক্তৃতা বাবু!
তুই হুই শহরের সাততলা বাড়ী থেকে
নামলি মাচায়,
এলি গাড়ী চড়ে মিটিং করতে
আমাদের শরীরের কালো রঙ সাবান মাখিয়ে ফর্সা করতে,
আমাদের ছেলে মেয়েদের ভালো,সভ্য করতে ;
এলি যেন লাট সাহেবের নাতি!
বক্তৃতা দিয়ে যাবিও
সেখানে—কল টিপলেই জল পড়ে।
ঘর আলো হয় ঘুটঘুটে কালো রাতে;
আবার বিজলি পাখাও ঘোরে-
বক্তৃতা দিয়ে শরীরে যদি ঘাম লাগে তোর, বক্তৃতা বাবু!
তুই বড় ভালো ছেলে।
আমাদের জন্য কত যে খাটিস-পিটিস!
কেবল ঘরের বিজলী পাখাটা বন্ধ হলেই মেজাজ গরম;
জলকে বরফ করার যন্ত্র-সেটাও বিকল!
তুই না রাজার বেটা!
রেশনে চাল ছেড়ে দিয়ে খাস বাসমতী চাল-
তবু আমাদের জন্য রাত্রে ঘুমাস না তুই ;
আহারে সোনার বাবু!
হেই বক্তৃতা বাবু ! হেই বক্তৃতা বাবু ! থু !

মুখোশ

কান্নাকে শরীরে নিয়ে যারা রাত জাগে,
রাত্রির লেপের নিচে কান্নার শরীর নিয়ে করে যারা খেলা
পৃথিবীর সেই সব যুবক যুবতী
রোজ ভোর বেলা
ঘরে কিংবা রেস্তোরাঁয় চা দিয়ে বিস্কুট খেতে-খেতে
হঠাত্ আকাশে ছোঁড়ে দু-চারটি কল্পনার ঢেলা
এবং হাজারে কয় রান ক’রে আউট হ’য়ে গেছে
ভুলে গিয়ে তারা হয় হঠাত্ অদ্ভুত |
যুবতীকে মনে হয়, কোনো-এক রহস্যের দূত
কার যেন স্মৃতিমুখ পাঠায়েছে আমাদের মতো কোনো প্রণয়ীর কাছে ;
সুন্দর কি কুত্সিত জানি না, তবু জানি মার্চেন্টের মারে নেই এই সব খুত |
কান্নাকে সরিয়ে রেখে দৈনিক কাগজ খুঁজি তাই,
যুবককে ভুলে যাই, যুবতীকে দূরে-দূরে রাখি ;
তারপর কোনো দিন যদি মনে হয়
দিনগুলি বাসি বড়ো, বিবর্ণ, একাকী,
প্রেমিক কি উদ্বাস্তুর মতো এক সমস্যার নিতান্তই মূর্খ হ’য়ে গেছে
আমার কী আসে যায়, তুড়ি মেরে এগজামিনে দিয়ে যাবো ফাঁকি !
অথবা কবিতা দিয়ে সমর্থন জানাবো তোমাকে,
হে প্রেমিক, হে উদ্বাস্তু, তোমাদের দুঃখে আমি গলে হব নদী !
হে দিন, হে কালরাত্রি,
না হয় আগলাবো আমি তোমাদের দুর্দিনের গলি |
তোমরা নির্বোধ হাতে স্মৃতিমুখ খুঁজে-খুঁজে প’ড়ে যাবে যখন অসুখে,
তোমাদের দুঃখে আমি ম’রে যেতে রাজি আছি—কারো দুঃখে মরা যায় যদি |
কী আশ্চর্য ! সেই ছেলে আমার দর্শন শুনে তবু
অর্ধেক বিস্কুট ফেলে রেস্টোরেন্ট থেকে
চ’লে গেলো | সেই মেয়ে সিনেমার বিজ্ঞপনে ভিড়ে
ডুবে গেলো, তারপর কী যেন বললো সঙ্গিনীকে |
মনে হ’লো হেমিংওয়ে মম্ নিয়ে ওদের বিবাদ
আজন্ম চলছে যেন, বন্ধুত্বটা কোনোমতে আছে তবু টিকে !
হঠাত্ পড়লো চোখে কাগজের এডিটোরিয়াল,
আমেরিকা ভালো, চীন ভালো…
ষ্ট্রম্যান পাঠাবে অন্ন আমাদের কাল
হৃদয় জুড়ালো |
হে যুবক, হে যুবতী, পৃথিবাতে তোমাদের কতটুকু দাম ?
কান্নাকে শরীরে নিয়ে কার ঘরে কয় ফোঁটা দিয়ে গেলে আলো ?

রাজা আসে রাজা যায়


রাজা আসে যায় রাজা বদলায়
নীল জামা গায় লাল জামা গায়
এই রাজা আসে ওই রাজা যায়
জামা কাপড়ের রং বদলায়….
. দিন বদলায় না!
গোটা পৃথিবীকে গিলে খেতে চায় সে-ই যে ন্যাংটো ছেলেটা
কুকুরের সাথে ভাত নিয়ে তার লড়াই চলছে, চলবে |
পেটের ভিতর কবে যে আগুন জ্বলেছে এখনো জ্বলবে!

রাজা আসে যায় আসে আর যায়
শুধু পোষাকের রং বদলায়
শুধু মুখোশের ঢং বদলায়
. পাগলা মেহের আলি
. দুই হাতে দিয়ে তালি
এই রাস্তায়, ওই রাস্তায়
. এই নাচে ওই গান গায় :
“সব ঝুট হায়! সব ঝুট হায়! সব ঝুট হায়! সব ঝুট হায়!”

জননী জন্মভূমি!
সব দেখে সব শুনেও অন্ধ তুমি!
সব জেনে সব বুঝেও বধির তুমি!
. তোমার ন্যাংটো ছেলেটা
. কবে যে হয়েছে মেহের আলি,
. কুকুরের ভাত কেড়ে খায়
. দেয় কুকুরকে হাততালি…
. তুমি বদলাও না ;
. সে-ও বদলায় না!

এসো প্রেমের গান গাই

রাজা দেখলাম, রানী দেখলাম
এবার একটু মানুষের কাছে বসতে চাই।
এসো আমরা প্রেমের গান গাই।
এসো, আমাদের প্রিয় কবির কাছে যাই,
তাকে বলি:
আপনি গাছ ফুল পাখি ভালবাসেন
আপনি মানুষ ভালবাসেন-
‘প্রেমের গান গাইতে আমাদের গলা কেঁপে যায়;
আপনি আমাদের গান শেখান!’
রাজা দেখলাম, রানী দেখলাম
এবার আমরা আমাদের প্রিয় কবির কাছে ফিরে যাবো।
তিনি আমাদের সেই গান শেখাবেন
যা তুমি আর আমি গাইতে চাই।
এইসব ছাইপাশ কবিতা আর ভাল লাগে না।
আর ভাল লাগে না ওদের মুখের ওপর
ঘৃণার কবিতা ছুঁড়ে দিতে।
এ কোনো মানুষের জীবন নয়, কবির জীবন নয়।
কিন্তু আমাদের চারদিকে বড় বেশি অন্ধকার।
আমরা কবির কাছে যেতে চাই, কিন্তু অন্ধকার…
অন্ধকারে আলাদিনের দৈত্য আমাদের পথ রুখে দাঁড়ায়
সে আমাদের কাছ থেকে কবিতা লেখার খাজনা চায়
সে আমাদের আইন শেখাতে চায়।
এসো, তাকে পরিষ্কার জানিয়ে দিই, আমরা খাজনা দেবো না।
আমরা সেই রাজা মানি না যার কাছে প্রেমের গান কোনো গান নয়।
আমরা সেই রানী মানি না যিনি আমাদের ভয় দেখিয়ে খাঁচার
পাখি বানাতে চান।
তাকে আমরা সহজ, স্পষ্ট গদ্য ভাষায় আমাদের বক্তব্য বলবো;
তার জন্য, রাজা-রানীদের জন্য, কোনো ঘৃণার কবিতাও আর নয়।
তারপর অন্ধকারে যেদিকে দুচোখ যায়, আমরা এগিয়ে যাবো।
কবিকে না পাই, আমরা চিৎকার করে তাঁর কবিতা বলবো-
আমাদের বেসুরা গলায় হয়তো উচ্চারণ ঠিকমত হবে না,
হয়তো তাঁর প্রেমের গান কান্নার মত শোনাবে;
কিন্তু আমরা চেষ্টা করবো, আমাদের গান যেন কান্না না হয়
যেন আমাদের ভালোবাসা কবিতার আগুনে নম্র হয়, পবিত্র হয়-
মানুষের জন্য। আমরা মানুষকে স্পর্শ করতে চাই।
আমাদের প্রেমের গান
যদি গান হয়ে না ওঠে, তবু মানুষ আছে, মানুষ থেকে যায়…
তারপর নতুন কবিরা আসবে, শুদ্ধ উচ্চারণে তারা প্রেমের গান গাইবে…
আমরা তো শুধু রাস্তা হাঁটছি…
অন্ধকারে চলতে চলতে, আছাড় খেতে খেতে, বারবার ভুল
গান গাইতে গাইতে
তুমি আর আমি কান পেতে থাকবো
তুমি আর আমি কান পেতে থাকবো: ‘কে যায় অন্ধকারে ?’…
‘কে আসে ?’

তুমি এলে

তুমি এলে সূর্যোদয় হয়।
পাখি জাগে সমুদ্রের ঘাটে
গন্ধের বাসরঘর জেগে ওঠে উদাসীন ঘাসের প্রান্তরে
হাড়ের শুষ্কতা, ভাঙা হাটে।
তুমি এলে চাঁদ ওঠে চোখে
সুস্বাদু ফলের মতো পেকে পরিপূর্ণ হয়
ইচ্ছা, প্রলোভন,
ঘরের দেয়াল ভেঙে ঘরে ঢুকে পড়ে দুর
ভ্রমনের বন।
তুমি এলে মেঘ বৃষ্টি সবই মুল্যবান।
আমাদের কাঠের চেয়ার
যেদিকে শহর নেই, শ্রাবণের মেঘমল্লার
মাতাল নৌকার মতো ভেসে যায় ভবিষ্যৎহীন।
পৃথিবী পুরনো হয়
পৃথিবীর ছাইগাদা, ছন্নছাড়া দৃশ্যের বিভুঁয়ে
শতাব্দীর শোক-তাপ জ্বর-জালা ছুঁয়ে
রয়ে যাই আমরা নবীন।

Text Widget

Text Widget